বগুড়ার দই নিয়ে যে ৬ তথ্য জানা দরকার
মিষ্টি তো মিষ্টিই, তবু তার সঙ্গে দই-এর মিলন না হলে জুড়িটা যেন ঠিকমতো মেলে না। সে কারণেই লোকে বলে ‘দই-মিষ্টি’। দইয়ের দোকানে মিষ্টি, আর মিষ্টির দোকানে দইয়ের নির্বিরোধ সহাবস্থান সুনিশ্চিত। একেক এলাকার দই-মিষ্টির স্বাদ একেক রকম। দীর্ঘকালের ঐতিহ্যের পরম্পরায় কোনা কোনো এলাকার দই মিষ্টি খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার তুঙ্গ স্পর্শ করে। তখন সেটি ওই এলাকার পরিচয়ের স্মারক বা প্রতীক হয়ে ওঠে। যেমন বগুড়ার দই। এবার তার খ্যাতির মুকুটে যুক্ত হলো ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) ২৫ জুন এ অনুমোদন দেয়। ওই দিন বগুড়ার দই ছাড়া জিআই স্বীকৃতি পাওয়া অন্য পণ্যগুলো হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম। এ নিয়ে দেশের ১৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল। জেনে নেওয়া যাক দই এবং সেই সঙ্গে বগুড়ার দইয়ের নানা তথ্য।
(১) দইয়ের চল চার হাজার বছর আগে
বলে রাখা ভালো দই যত জনপ্রিয়ই হোক, এটি আমাদের নিজস্ব খাদ্য নয়। প্রায় চার হাজার বছর আগে দইয়ের চল শুরু হয়েছিল সুমেরীয় বা আক্কাদীয় যাযাবর নোম্যাডিক জাতির কল্যাণে। তারা চামড়ার মশকে করে দুধ সংরক্ষণ করত। এক বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংযোগ গাঁজন প্রক্রিয়ায় দুধ জমে দই হয়ে যেত। এখনো সেই একই প্রক্রিয়াতেই দই তৈরি হয়ে থাকে। তবে বহু পরে ১৯০৪ সালে এই ব্যাকটেরিয়াকে শনাক্ত করেছিলেন বুলগেরিয়ার বিজ্ঞানী স্টামেন গ্রিগোরভ। তাঁর স্বদেশের নাম যুক্ত করে ব্যাকটেরিয়াটির নাম রাখা হয়েছে ‘ল্যাকটোব্যাসিলাস বুলগেরিকু’। বাণিজ্যিকভাবে দইয়ের উৎপাদন এবং আধুনিক বিশ্বে দইয়ের প্রচলনের কৃতিত্ব বুলগেরিয়ার। সেই দই কালক্রমে পরিতৃপ্ত করেছে বাঙালির রসনা।
(২) বগুড়ার দইয়ের ইতিহাস শুরু শেরপুরে
দইয়ের আদি নিবাস যেমন বঙ্গদেশে নয়, তেমনি জিআই সনদ পাওয়া বগুড়ার দইয়ের আদি নিবাসও বগুড়া শহরে নয়, পাশের উপজেলা শেরপুরে। প্রায় দেড় শ বছর আগে শেরপুরে হিন্দু ঘোষ সম্প্রদায়ের কারিগরেরা দই তৈরির বনিয়াদ করেছিলেন। এখানে ঘোষপাড়া নামের একটি মহল্লায় গড়ে উঠেছে দই তৈরির বিশাল কর্মযজ্ঞ। শেরপুরের দইয়ের প্রবল অনুরাগী ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নবাব মোহাম্মদ আলী। তিনি শেরপুরের ঘোষপাড়ার গৌর গোপালকে বগুড়ায় নিয়ে যান। নবাববাড়ি রোডে গৌর গোপাল তাঁর দইয়ের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৩৮ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ গভর্নর স্যার জন এন্ডারসন বগুড়ায় নবাববাড়িতে অতিথি হয়ে এলে কাচের পাত্রে পাতা দই দিয়ে নবাব তাঁকে আপ্যায়িত করেন। গভর্নর বগুড়ার দইয়ের স্বাদে পরিতৃপ্ত হয়ে ইংল্যান্ডে দই নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এভাবেই কালক্রমে বগুড়ার দই দেশের বাইরেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।